জাতীয় আরকাইভস ভবন | জাতীয় গ্রন্থাগার ভবন |
১৮৯১ সনের ১১ মার্চ কোলকাতায় ইমপেরিয়াল রেকর্ড ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ সনে দেশ বিভাগের পর ইমপেরিয়াল রেকর্ড ডিপার্টমেন্টই ন্যাশনাল আরকাইভস অব ইন্ডিয়া নামে পরিচিতি পায়। ১৯৫১ সনের নভেম্বরে করাচীতে ডাইরেক্টরেট অব আরকাইভস এন্ড লাইব্রেরিস এর অধীনে ন্যাশনাল আরকাইভস অব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা পূর্বকালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে উক্ত অফিসের শাখা অফিস হিসেবে ঢাকার মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডের ভাড়া বাড়িতে ‘‘ডেলিভারী অব বুকস এন্ড নিউজ পেপার শাখা’’ নামে একটি অফিস চালু ছিল। জাতীয় আরকাইভস এর কোন শাখা পূর্ব পাকিস্তানে ছিল না।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ সময়ে উক্ত অফিসের দায়িত্বে ছিলেন জনাব মোঃ আবুল হাশেম। যুদ্ধ চলাকালে সহকারী পরিচালক জনাব সাহাবুদ্দিন খান করাচী থেকে চলে এসে সেখানে যোগদান করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে তারা ১০৩ পুরাতন এলিফ্যান্ট রোডে একটি পরিত্যক্ত বাড়ীর দোতলায় শাখাটি স্থানান্তর করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবান দলিলসমূহসহ সরকারের স্থায়ী রেকর্ডস ও আরকাইভস সমূহ সংরক্ষণের গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৭২ সনে সদ্য স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক বিভাগের অধীনে জাতীয় আরকাইভস ও জাতীয় গ্রন্থাগার এর সমন্বয়ে আরকাইভস ও গ্রন্থাগার পরিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করে।
৬ নভেম্বর ১৯৭২ তারিখে ড. খোন্দকার মাহবুবুল করিম, পরিচালক, পাকিস্তান ডাইরেক্টরেট অব আরকাইভস এণ্ড লাইব্রেরিস পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগদান করলে তাকে পরিচালক, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার পরিদপ্তর হিসেবে এডহক দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ১৯৭৩ সনের মধ্যে পাকিস্তান থেকে অন্যান্য বাঙ্গালি কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ রিপ্যাট্রিয়েশনের মাধ্যমে দেশে ফেরৎ এসে ১০৩ পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড এবং ৩৭২ পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড অফিসে যোগদান করেন। এরপরই প্রথম ৪৮টি পদ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অস্থায়ী জনবল কাঠামো ও বাজেট অনুমোদিত হয়।
১৯৭৪ সনের ৩ জানুয়ারি সরকার জাতীয় আরকাইভস ও জাতীয় গ্রন্থাগারের জন্য ৩২, বিচারপতি এস.এম মোর্শেদ সরণি, আগারগাঁও, শেরেবাংলা নগর এর বর্তমান জায়গায় ২ একর করে মোট ৪ একর জমি বরাদ্দ করে। প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনার আওতায় জাতীয় আরকাইভস ও জাতীয় গ্রন্থাগারের স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য সরকারের নিকট প্রকল্প প্রস্তাব দাখিল করা হয়। শেরেবাংলা নগরের অন্যান্য ভবনসমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্থপতি খন্দকার মাজহারুল ইসলাম এর নেতৃত্বে ভবনটির স্থাপত্য নকশা তৈরি করা হয়। প্রকল্প প্রস্তাব ও নকশা অনুমোদনের পর প্রথম পর্যায়ে জাতীয় গ্রন্থাগার ভবনের নির্মাণ কাজ শুরুর লক্ষ্যে ২১ জানুয়ারি ১৯৭৮ তারিখে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়। ১৯৭৯ সনে ১০৩ পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড থেকে জাতীয় গ্রন্থাগার ১০৬, সেন্ট্রাল রোডের ভাড়া বাড়ীতে স্থানান্তর করা হয়।
ভবন নির্মাণ শেষে ১৯৮৫ সনের ১ নভেম্বর জাতীয় গ্রন্থাগারের স্থায়ী ভবন আগারগাঁও এ স্থানান্তরিত হয়। কিছুদিন পর ৩৭২ এলিফ্যান্ট রোড থেকে জাতীয় আরকাইভস ও জাতীয় গ্রন্থাগার ভবনে স্থানান্তরিত হয়।
১৯৯৫ সনে জাতীয় আরকাইভস ভবন নির্মাণ (প্রথম পর্যায়) শুরু হলে ২০০১ সনের ১৪ জুন বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০০৬ সালে জাতীয় আরকাইভস তার নিজস্ব ভবনে কার্যক্রম শুরু করে। সর্বশেষ ১৬ আগস্ট ২০১৬ তারিখে ৪১ টি নতুন পদ সৃষ্টির জিও জারির মাধ্যমে আরকাইভস ও গ্রন্থাগার পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে উন্নীত করার আদেশ জারি হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখের ০৫.০০.০০০০.১৩২.১৯.০০১.১৭-১২৬ নম্বর আদেশের অনুবৃত্তিক্রমে ১২ মার্চ ২০১৮ তারিখে অতিরিক্ত সচিব জনাব দিলীপ কুমার সাহা এ অধিদপ্তরের প্রথম মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করেন।
অরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের প্রধান কার্যাবলি:
১। অন্যূন ২৫ বছরের পুরানো রেকর্ডপত্র সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ডিজিটাইজেশন;
২। বাংলাদেশে প্রকাশিত সকল নূতন, সৃজনশীল ও মৌলিক প্রকাশনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ;
৩। আরকাইভাল সামগ্রী ও সংগৃহীত গ্রন্থাগার সামগ্রী ডিজিটাইজেশন, ডিজিটাল ক্যাটালগ তৈরি ও অনলাইন তথ্যসেবা প্রদান;
৪। জাতীয় গ্রন্থপঞ্জি প্রণয়ন, প্রকাশ ও বিতরণ;
৫। রেকর্ড ও আরকাইভ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও দপ্তর সংস্থার কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান;
৬। দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/দপ্তর/সংস্থা ও গ্রন্থাগারে কর্মরত পেশাজীবীদের প্রশিক্ষণ প্রদান;
৭। ISBN (International Standard Book Number) বরাদ্দদান, সেবা ডিজিটাল ও অনলাইনকরণ;
৮। পাঠক ও গবেষকদের সেবা প্রদান।